1970 এর দশকে গাছ তথা বনভূমিকে রক্ষা করার জন্য সম্পুর্ন অহিংস ও পরিবেশগত ভাবে স্থানীয় মহিলা গ্রামবাসী কর্তৃক সরকারের বিরুদ্ধে যে তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলন হয়েছিল ইতিহাসে তা "চিপকো আন্দোলন নামে পরিচিত। এই আন্দোলন উত্তরপ্রদেশের (বর্তমানে উত্তরাখন্ড ) পার্বত্য হিমালয় উপত্যকার গাড়োয়াল অঞ্চলে হয়েছিল। হিন্দি শব্দ 'চিপকো' এর অর্থ আলিঙ্গন করা।
আন্দোলনের কারন:
Sino-Indian Border দ্বন্দ্বের পর উত্তরপ্রদেশ সরকার গ্রামীন হিমালয় অঞ্চল উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য দেয়। যে বনভূমির উপর গ্রামবাসীরা জীবন ধারণের জন্য সম্পূর্ণ রূপে নির্ভরশীল ছিল সেই বনভূমি কেটে রাস্তা নির্মাণের জন্য সরকার কিছু বিদেশি কোম্পানিকে বরাত দেয়। কিন্তু অবৈজ্ঞানিক ভাবে এবং প্রচুর পরিমানে গাছ কেটে ফেলার ফলে সেই অঞ্চলে ভূমি ক্ষয়, বন্যার পরিমান বৃদ্ধি , ভৌম জলস্তর নীচে নেমে যায় এবং কৃষি ক্ষেত্রে এক ভয়ংকর প্রভাব দেখা দেয়।
আন্দোলন:
1964 সালে গান্ধীবাদী সমাজসেবক চন্ডী প্রসাদ ভাট গ্রামবাসীদের জন্য স্থানীয় সম্পদের উপর নির্ভর করে "দাসোলি গ্রাম স্বরাজ্য মন্ডল" নামে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কিন্তু সরকারি নির্দেশে সেখানে প্রচুর গাছ কেটে ফেলার জন্য 1970 সালে বর্ষার সময় ভয়ঙ্কর বন্যার সৃষ্টি হয় ও 200 জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়। তখন চন্ডী প্রসাদ ভাটের সেই সংস্থা 1973 সালে উচ্চ অলকানন্দা উপত্যকায় সরকারের গাছ কাটার বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলেন। গ্রামবাসীদের সামান্য কৃষি সরঞ্জামাদি তৈরির জন্য গাছ কাটার অনুমতি মেলেনা অথচ সরকার খেলার সরঞ্জাম তৈরির বড়ো শিল্পের জন্য গাছ কাটার অনুমতি দেয়। অথচ এই বনভূমির সবচেয়ে বড় রক্ষক ও অংশীদার এই গ্রামবাসীরাই। গ্রামবাসীদের আবেদনে সরকার সাড়া না দিলে চন্ডী প্রসাদ ভাট সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গ্রামবাসীদের নিয়ে বনের গাছকে আকড়ে ধরে বা (চিপকে) রেখে প্রতিবাদ জানায়। কিছুদিন পর সরকার তার নিজের অবস্থান থেকে সরে আসে ও গ্রামবাসীরা তাদের অধিকার ফিরে পায়।
পরবর্তীকালে স্থানীয় পরিবেশবিদ সুন্দরলাল বহুগুনা এই চিপকে থাকার পন্থা কে পাশের গ্রাম গুলিতেও প্রচার করতে থাকেন। পরবর্তীতে 1974 সালে রেনি গ্রামে সরকার প্রায় 2000 গাছ কেটে ফেললে সেখানে সুন্দরলাল বহুগুনার নেতৃত্বে এক বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। করাতকলের সদস্যরা গাছ কাটতে এলে সেখানে রুখে দাঁড়ান গওরা দেবী ও তাঁর সঙ্গী মহিলা মঙ্গল মণ্ডল। গাছকে জড়িয়ে থেকে প্রতিবাদে সরব হন জঙ্গলের বাসিন্দারা। পরবর্তীকালে বহু লড়াইয়ের পর গওয়ার দেবীরা সবুজে বাঁচাওয়ের আন্দোলন জিতে যান।
এই ভাবে হিমালয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন চলতে থাকে। সর্বশেষ সফলতা আসে 1980 সালে, সুন্দরলাল বহুগুনা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে গাছ না কাটার আবেদন জানানোর পর। তার আবেদনে সাড়া দিয়ে উত্তরাখণ্ডের হিমালয় অঞ্চল, হিমাচল প্রদেশে 15 বছরের জন্য সরকার গাছ কাটা বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করে।
প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
0 Comments
If you have any doubt, please let me know.