ভূমিকম্প তরঙ্গের গতিবিধি, আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে বেরোনো লাভা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ভু-অভ্যন্তরে প্রধানত তিনটি স্তরের সন্ধান পেয়েছেন। যথা- সবার উপরে ভূ-ত্বক বা Crust , তার নীচে গুরুমন্ডল বা Mantle এবং একেবারে নীচে কেন্দ্র মন্ডল বা Core ।
1. ভূ-ত্বক:-
মহাসাগরের নীচে ভূ-ত্বক গড়ে 5 km এবং মহাদেশের নীচে গড়ে 70 km পর্যন্ত গভীর। এর গড় গভীরতা 30 km। মহাদেশের নীচে সিলিকন (Si) ও অ্যালুমিনিয়াম (Al) দ্বারা গঠিত ভু-ত্বকের ওপরের স্তরটি হলো সিয়াল (SIAL)। এই স্তরটি গ্রানাইট শিলা দ্বারা গঠিত। আর মহাসাগরের নীচে প্রধানত সিলিকন (Si) ও ম্যাগনেশিয়াম (Ma) দ্বারা গঠিত ভু-ত্বকের নিচের স্তরটি হলো সিমা (SIMA)। এই স্তরটি ব্যাসল্ট শিলা দ্বারা গঠিত। এই সিয়াল ও সিমা স্তরকে কনরাড বিযুক্তি রেখা দ্বারা আলাদা করা হয়েছে।
2. গুরুমন্ডল:-
ভূ-ত্বকের শেষ সীমা থেকে পৃথিবীর অভ্যন্তরে 2900 km পর্যন্ত একই ঘনত্ব যুক্ত স্তরই হলো গুরুমন্ডল। গুরুমন্ডলের 30 km থেকে 700 km পর্যন্ত অংশে ক্রোমিয়াম (Cr), লোহা (Fe), সিলিকন (Si), ম্যাগনেশিয়াম (Ma) এর প্রাধান্য যুক্ত স্তরকে ক্রোফাসিমা এবং 700 km থেকে 2900 km পর্যন্ত অংশে নিকেল (Ni), লোহা (Fe), সিলিকন (Si), ম্যাগনেশিয়াম (Ma) এর প্রাধান্য যুক্ত স্তরকে নিফেসিমা বলাহয়। রেপিত্তি বিযুক্তি রেখা দ্বারা এই দুটি স্তরকে আলাদা করা হয়েছে। মোহোরোভিসিক বিযুক্তি রেখা দ্বারা ভূ-ত্বক থেকে গুরুমন্ডলকে আলাদা করা হয়েছে।
📍Asthenosphere:- শিলামন্ডলের নিচে গুরুমন্ডলের ওপরের অংশের যে স্তরে অত্যধিক তাপ ও চাপে শিলা সান্দ্র অবস্থায় রয়েছে তাকেই আস্থেনোস্ফিয়ার বলাহয়। এই স্তরের উপরেই শিলামন্ডল ভাসমান অবস্থায় রয়েছে।
3. কেন্দ্রমন্ডল:-
ভূ-ত্বক ও গুরুমন্ডলের পরবর্তী পৃথিবীর কেন্দ্রের চারিদিকে বেষ্টনকারী শেষ স্তরটি হলো কেন্দ্র মন্ডল। এই স্তরটি 3500 km পুরু। অত্যন্ত ভারী নিকেল (Ni) ও লোহা (Fe) দিয়ে গঠিত হওয়ায় এই স্তরকে "নিফে" বলাহয়। এই স্তরের গড় তাপমাত্রা 5000℃ । কেন্দ্রমন্ডলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- ১) অন্তঃ কেন্দ্রমন্ডল যা 5100 km থেকে 6730 km গভীরে অবস্থিত।অত্যধিক তাপ ও চাপে এখানে সমস্ত পদার্থ সান্দ্র অবস্থায় রয়েছে। ২) বহিঃ কেন্দ্রমন্ডল যা 2900 km থেকে 5100 km গভীরতায় অবস্থিত। এই স্তরে অর্ধ কঠিন অবস্থায় লোহা পৃথিবীর অক্ষের চারিদিকে প্রচন্ড গতিতে আবর্তন করার ফলে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করেছে, যেখান থেকেই সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র। লেহম্যান বিযুক্তি রেখা দ্বারা পৃথিবীর অন্তঃ কেন্দ্রমন্ডল ও বহিঃ কেন্দ্রমন্ডল কে আলাদা করা হয়েছে এবং গুটেনবার্গ বিযুক্তি রেখা দ্বারা গুরুমন্ডল ও কেন্দ্র মন্ডল কে পৃথক করা হয়েছে।
0 Comments
If you have any doubt, please let me know.