Pressure Belts চাপ বলয়।

 বায়ুচাপ বলয়:

সংজ্ঞা- পৃথিবী পৃষ্ঠের ওপর নির্দিষ্ট দূরত্বে সমধর্মী বায়ুস্তর অনুভূমিক ভাবে প্রায় হাজার কিলোমিটার জুড়ে পুরো পৃথিবীকে কয়েকটি বলয়ের আকারে বেষ্টন করে আছে। একেই বায়ু চাপ বলয় বা Pressure Belt বলে।

সমগ্র পৃথিবীতে মোট 7 টি বায়ু চাপ বলয় লক্ষ্য করা যায়। সেগুলি হলো 1) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়, 2) কর্কটিয় উচ্চ চাপ বলয়, 3) মকরিয় উচ্চ চাপ বলয়, 4) সুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্ন চাপ বলয়, 5) কুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্ন চাপ বলয়, 6)সুমেরু উচ্চ চাপ বলয়, 7) কুমেরু উচ্চ চাপ বলয়।

1. নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়:-
নিরক্ষ রেখার (0°) উভয়দিকে 5° অক্ষরেখার মাঝে এই বায়ুচাপ বলয় দেখতে পাওয়া যায়।
🖌️নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টির কারন:
১. নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য সারা বছর লম্ব ভাবে কিরণ দেওয়ায় এখানকার বায়ু সারাবছর সারাবছর উষ্ণ থাকে।
২. এই অঞ্চলে স্থল ভাগের চেয়ে জলভাগের পরিমান বেশি । উষ্ণ বায়ুর জল ধারণ ক্ষমতা বেশি ও ঘনত্ব কম হওয়ায় হালকা হয়। এই হালকা বায়ু প্রসারিত হয়ে উপরে উঠে যায়।

৩. এই ঊর্ধগামী বায়ু পৃথিবীর আবর্তন গতির কারনে নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ছিটকে যায়, ফলে এই অঞ্চলে বায়ুর পরিমান কমে গিয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।


🖌️ নিরক্ষীয় শান্তবলয় বা Doldrums:
নিরক্ষীয় অঞ্চল বরাবর উষ্ণ ও হালকা বায়ু সোজা উপরের দিকে উঠে যাওয়ায় এখানে বায়ুর ঊর্ধমুখী স্রোত লক্ষ্য করা যায়। ভু-পৃষ্ঠের সমান্তরালে কোনো বায়ু প্রবাহিত না হওয়ায় এখানে বায়ুর চলাচল অনুভব করা যায় না। সবসময় শান্ত ভাব বিরাজ করে। তাই এই অঞ্চলের নাম নিরক্ষীয় শান্ত বলয় বা ডোলড্রামস। প্রাচীন কালে এই অঞ্চলের উপর দিয়ে জাহাজ চলাচলের সময় থেমে যেত তাই নাবিকরা এই অঞ্চলের নাম দেন ডোল ড্রামস যার অর্থ শান্ত অবস্থা।

2. কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয়:
উভয় গোলার্ধে 25° থেকে 35° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চল কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় অঞ্চল নামে পরিচিত।
🖌️কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টির কারন:
১. নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উষ্ণ আর্দ্র হালকা বায়ু উপরের দিকে উঠতে শুরু করে। এই ঊর্ধগামী বায়ুর উষ্ণতা ক্রমশ কমতে থাকে। ধীরে ধীরে বায়ু ঠান্ডা ও ভারী হয়ে ঘনত্বে বেড়ে যায়। পৃথিবীর আবর্তনের ফলে নিরক্ষীয় ও মেরু অঞ্চলে এই বায়ু বিক্ষিপ্ত হয়।
২. এই বিক্ষিপ্ত ভারী বায়ু কর্কটীয় ও মকরীয় অঞ্চলে নেমে আসে এবং মেরু অঞ্চল থেকেও ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাস নীচের দিকে নেমে এসে এই দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থান করে।

৩. দুটি বিপরীত ধর্মী বাতাস দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে মিলিত হবার ফলে এখানে বায়ুর পরিমাণ ও ঘনত্ব বেড়ে যায়। ফলে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়।
🖌️ অশ্ব অক্ষাংশ:
ষোড়শ শতকে কর্কটীয় ও মকরীয় শান্ত বলয় দিয়ে পালতোলা জাহাজ গুলো চলাচলের সময় গতিহীন হয়ে পড়ত। ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ থেকে আসা ঘোড়া ভর্তি বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ আমেরিকায় যেতে অনেক সময় বেশি লাগতো।এই অবস্থায় জাহাজের ভার কমাতে পানীয় জল ও খাবারের সংকট এড়াতে কিছু জীবন্ত ঘোড়া কে আটলান্টিক মহাসাগরে ফেলে দিত। এই কারনে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলের (25° থেকে 35° উঃ ও দঃ) অশ্ব
 অক্ষাংশ নামে পরিচিত।
3. মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়:
উভয় গোলার্ধে 60° থেকে 70° অক্ষরেখার মাঝে এই নিম্নচাপ বলয় দেখতে পাওয়া যায়। উত্তর গোলার্ধে একে সুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় ও দক্ষিণ গোলার্ধে একে কুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় বলা হয়।

🖌️মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টির কারন:
১. দুই গোলার্ধে মেরু অঞ্চলের তুলনায় পার্শ্ববর্তী মেরু বৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলের উষ্ণতা বেশী হওয়ায় এই অঞ্চলের বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে প্রসারিত হয়।
২. এই ঊর্ধগামী বায়ু পৃথিবীর আবর্তনের কারনে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে উভয় গোলার্ধের ক্রান্তীয় ও মেরু অঞ্চলের দিকে নেমে আসে। ফলে দুই মেরু বৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলে বায়ুর পরিমান কমে ঘনত্ব হ্রাস পায়। ফলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।

4. সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয়:
উভয় গোলার্ধে 80° অক্ষরেখা থেকে মেরু বিন্দুর মধ্যবর্তী অঞ্চলে এই দুটি বায়ু চাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
🖌️সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টির কারন:
১. দুই মেরু অঞ্চল প্রায় সারা বছর বরফে ঢাকা থাকায় উষ্ণতা হিমাঙ্কের নীচে থাকে। তাই এখানকার বাতাস ভীষন ভারী ও শীতল।
২. এই অঞ্চলে সূর্য রশ্মি তীর্যক ভাবে পড়ায় তাপের অভাবে বাস্পীভবনের পরিমান খুব কম। ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও কম ।
৩. পৃথিবীর আবর্তনের কারনে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চল থেকে বায়ুর কিছু অংশ মেরু অঞ্চলে নেমে আসে। ফলে এখানে উচ্চ চাপের সৃষ্টি হয়।

প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Post a Comment

0 Comments